মার্কিন স্বার্থবিরোধী পররাষ্ট্রনীতি ও ইমরান খানের পদচ্যুতি

মার্কিন স্বার্থবিরোধী পররাষ্ট্রনীতি ও ইমরান খানের পদচ্যুতি

পাকিস্তানের পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দৃঢ় বিশ্বাস তিনি মার্কিন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। এই বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার পক্ষে যথেষ্ট কারণ এবং প্রমাণ রয়েছে। তার এই পদচ্যুতির পেছনে দেশি বিদেশি দীর্ঘ ষড়যন্ত্র রয়েছে। তবে বরখাস্তের যে গতি এবং প্রক্রিয়া তা অনেকটা একটি শ্বেত বিপ্লবের মতোই ছিল।

ইমরান খানই এই ষড়যন্ত্রের প্রথম শিকার নন। ইরাকেও আদেল আবদুল-মাহদি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বেশ দক্ষতা ও কর্মক্ষমতার সঙ্গে সরকার পরিচালনা করেছিলেন। তিনিও পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে ইমরান খানের মতোই একটি স্বাধীন কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করার চেষ্টা করেছিলেন। চীনের সঙ্গে ঘনিষ্টতার সুবাদে তিনি ইরাকের পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য তার ক্ষমতা ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন। আর এটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার জন্য। তিনি আমেরিকার রোষানলে পড়ে যান এবং শেষ পর্যন্ত পদচ্যুত হয়েছিলেন।

লেবাননের কথাও এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে। সাদ হারিরর প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় লেবানন সরকার অনুরূপ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন। তাকেও পদত্যাগ করতে হয়েছিল। হাসান দিয়াবও ব্যাপক সংকটের মধ্যেও সরকার পরিচালনা করে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তাকেও একইরকম ষড়যন্ত্রের মুখে ইস্তফা দিতে হয়েছিল।

এইসব উদাহরণ থেকে প্রমাণিত হয় যে দেশের সরকারই মার্কিন স্বার্থ বিরোধী স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে তাকেই পরিণতি ভোগ করতে করতে হয়। আদেশ আবদুল মাহদি, সাদ হারিরি এবং হাসান দিয়াব পদচ্যুত হয়েছিল ট্রাম্প সরকারের আমলে,আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পদচ্যুত হলেন ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনের আমলে। তার মানে দাঁড়ায় ট্রাম্পের সমালোচনায় মুখর হলেও বাইডেন মূলত ট্রাম্পের নীতিই অনুসরণ করছে।

যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয় তা হলো এইসব পদচ্যুতি কিংবা শ্বেত বিপ্লবের ঘটনায় আমেরিকা একা ছিল না। আমেরিকার সঙ্গে তাদের আরব মিত্ররা এবং ইহুদিবাদী ইসরাইলেরও যোগসাজশ ছিল এবং আছে। ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে সৌদি আরবেরও সক্রিয় ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হয়।

ইমরান খান স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করার কারণে কিংবা চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরির কারণে একদিকে আমেরিকা অসন্তুষ্ট হয়েছিল। অপরদিকে ইয়েমেন যুদ্ধে সহযোগিতা করার জন্য সৌদি আরব ইমরান খানকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও সাড়া না দেওয়ায় রিয়াদও অসন্তুষ্ট হয়েছিল পাকিস্তান তথা ইমরান খানের ওপর। পাকিস্তানে ইমরান খানের পদচ্যুতির একই সময়ে রিয়াদে ইয়েমেনি ব্যক্তিত্ববর্গের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবার ঘটনাও সেরকমই ইঙ্গিত বহন করে। আরো যে বিষয়টি প্রমাণ করে তা হলে ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতির ঘটনা মূলত সানা সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপে বসার জন্য নয় বরং উল্টো পাকিস্তানের পরিবর্তিত রাজনৈতিক অবস্থাকে তাদের সেনাদের উজ্জীবিত করে তোলার জন্য কাজে লাগানো।

সুতরাং পাকিস্তানে ইমরান খানের পদচ্যুতির ঘটনাকে অভ্যন্তরীণ বিষয় বলা ঠিক হবে না বলেই বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা।#

পার্সটুডে

Related Articles