দেশি পণ্যের মেলায় বিদেশিদের ভিড়

দেশি পণ্যের মেলায় বিদেশিদের ভিড়

কথা ছিল, তৃতীয় দিনেই শেষ হবে মেলা। গিয়ে দেখি, ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ।’ মেলার আয়ু বেড়েছে আরও এক দিন। চলবে আজ রোববার রাত ৯টা পর্যন্ত। গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানে বসেছিল ‘বাহারি’ নামের এই দেশীয় পণ্যের মেলা। মেলায় নিচতলা আর দোতলা মিলে ১৭টি অনন্য উদ্যোগের পাশাপাশি নিজেদের পসরা সাজিয়ে বসেছে। সেসব ঘুরে ঘুরে পণ্য কিনছেন, সেবা নিচ্ছেন দেশি ও বিদেশি ক্রেতারা। মেলায় প্রাধান্য পেয়েছে পরিবেশবান্ধব আর কুটিরশিল্পজাত পণ্য।

মেলারই এক দোকানের নাম সবুজ সাথী। আপনাদের বিশেষত্ব কী, জানতে চাইলে এই উদ্যোগের মার্কেটিং বিভাগের প্রধান পার্থিব মাহবুব বললেন, তাঁরা যেসব নিত্যব্যবহার্য পণ্য উৎপাদন করেন, সেসবের একটাই উদ্দেশ্য, কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানো। বললেন, ‘আমাদের সবকিছুই ক্লাইমেট ফ্রেন্ডলি। আমরা যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক উপাদানে দৈনন্দিন কাজে লাগে, এমন সব পণ্য বানাই। প্যাকেজিংও কাগজ বা পাটের। এগুলো আবার পুনর্ব্যবহারযোগ্য।’

পার্থিবের সঙ্গে যখন কথা চলছে, তখন স্টলে এলেন সবুজ সাথীর উদ্যোক্তা। পরিচয় দিয়ে ক্রেতাদের উদ্দেশে বললেন, ‘আপনারা কেবল ক্রেতা নন। আপনারা এই উদ্যোগের সহযাত্রীও। আমাদের ছয় মাস বয়সী সবুজ সাথী এখনো পরীক্ষামূলক অবস্থানে রয়েছে। আপনারা পণ্য কেনেন বা না কেনেন, যেকোনো কিছু সম্পর্কে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানিয়ে আমাদের উদ্যোগকে সমৃদ্ধ করবেন।’ বোঝা গেল, মহামারিকাল মানুষকে প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন করেছে। ব্যবসাতে তার ছাপ স্পষ্ট। ক্রেতারা যেমন পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদনে আগ্রহী হয়েছেন, বিক্রেতারাও তেমন হাত বাড়াচ্ছেন সেগুলোর দিকে।

স্টলে স্টলে ঘুরতে ঘুরতেই দেখা হয়ে গেল উদ্যোক্তা জোহরা খানের সঙ্গে। ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তখনই একবার ঘুরতে গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ আর সোনারগাঁ। সেখান থেকে ফিরে তাঁর মনে হলো, বাজার যখন বিদেশি পণ্যে ভরে গেছে, এমন সময় দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে উচিত দেশি তাঁতের পণ্যের প্রসারে কাজ করা।

জোহরার গুলশানের বাড়িতে দুজন তাঁতি সব সময় কাজ করেন। পরিচিত তাঁতিদের দিয়ে নিজেদের সুতা আর মৌলিক নকশা দিয়ে কাজ করান। আর কিছু সংগ্রহও করেন। এভাবেই চলছে তাঁর জিকে কুটোর। এই স্টলে আছে ১৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকার জামদানি শাড়ি। বেশ কয়েকটি লাখ টাকার শাড়ি বিক্রিও হয়েছে এই মেলায়। করেন এসব শাড়ি, ওড়না বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও করেন জোহরা।

মেলায় অংশ নিয়েছিল পাটজাত পণ্যের স্টল জুটমামা, রিসাইকেল জুয়েলারি আদি লোহাকাড়া, আপসাইকেল অ্যাক্সেসরিজ এমআইবি স্পিরিট, মানসিক স্বাস্থ্য ক্লিনিক পিএইচডব্লিউসি, গ্রোসারি আইটেম চালডাল, প্ল্যান্ট, উপহারসামগ্রী প্ল্যান্ট অ্যাফেয়ারসহ বেশ কিছু উদ্যোগ। মেলায় ঘুরে মনে হলো, পণ্যের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি। অবশ্য সম্ভাব্য ক্রেতাদের শ্রেণি, আয়ের বিষয়টিও বিবেচনাধীন। তা ছাড়া মাস পেরোলেই ঈদ। সেই বিষয়ও হয়তো পণ্যের দামকে প্রভাবিত করেছে। সব মিলিয়ে মহামারিকালের থেমে থাকা পেরিয়ে গুলশান এলাকায় এ রকম বাহারি দেশি উদ্যোগের মেলা ক্রেতা ও বিক্রেতা দুই পক্ষের জন্যই স্বস্তির।

Related Articles