আমলাদের সঙ্গে বৈঠকঃ শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতি এড়াতে মোদিকে সতর্কবার্তা

আমলাদের সঙ্গে বৈঠকঃ  শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতি এড়াতে মোদিকে সতর্কবার্তা

শীর্ষস্থানীয় আমলারা প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করে বলেছেন, ভোটে জিততে জনপ্রিয় প্রতিশ্রুতির বন্যায় বাঁধ দিতে না পারলে ভারতের অবস্থাও অচিরেই শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে যাবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকা এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে শীর্ষ আমলাদের কেউ কেউ এই বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, প্রতিটি ভোটের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেভাবে জনপ্রিয় প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে, তাতে রাজ্যগুলোর দেউলিয়া হতে বেশি দেরি নেই। অর্থনৈতিকভাবে অকার্যকর এসব প্রতিশ্রুতির দায়ে আমলারা শাসক দল বিজেপিকেও শামিল করেছেন। তাঁরা বলেছেন, এখনই রাশ টানা না গেলে গ্রিস বা শ্রীলঙ্কা হতে ভারতকে বেশি অপেক্ষা করতে হবে না।

গ্রিসে কিছুদিন আগে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছিল। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার অবস্থা শোচনীয়। সে দেশের সরকারের অবস্থা টলমলে। অর্থনীতি বিপন্ন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতকে সাহায্যের হাত বাড়াতে হয়েছে। তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবিলায় সে দেশের সরকার দিশাহারা। জনজীবন বিপর্যস্ত।

প্রধানমন্ত্রী মোদি গত শনিবার তাঁর লোকনায়ক মার্গের সরকারি নিবাসে এই বৈঠক ডেকেছিলেন। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব রাজীব গৌবা, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের প্রিন্সিপাল সচিব পি কে মিশ্র এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভি সরকারি সূত্রের বরাতে এই বৈঠকের খবর দিয়ে জানিয়েছে, কেন্দ্র ও রাজ্যে কাজের অভিজ্ঞতা থাকা একাধিক শীর্ষ আমলা বলেছেন, সাম্প্রতিক নির্বাচনে জেতার তাড়নায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এমন সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা জনপ্রিয় হলেও অর্থনৈতিকভাবে টেকসই নয়। এই প্রবণতা বন্ধ না হলে দেশের অর্থনীতির হাল শ্রীলঙ্কার মতো হতে বেশি দেরি হবে না।

বিভিন্ন রাজ্য বিধানসভার সাম্প্রতিক নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় প্রতিশ্রুতি দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলেছিল, তা থেকে শাসক বিজেপিও বাদ যায়নি। আমলারা তার উল্লেখ করে কয়েকটি রাজ্যের অর্থনীতির শোচনীয় হাল তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, পাঞ্জাব, অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গে যে ধরনের জনপ্রিয় কর্মসূচির কথা ঘোষণা করা হয়েছে, অর্থনীতির পক্ষে তা মারাত্মক বিপজ্জনক। বিনা মূল্যে এই সব পরিষেবা চালানোর অর্থ দেউলিয়া হয়ে যাওয়া। ধারের বহর বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থায় পৌঁছবে যে ঋণ শোধ করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়াবে। আমলারা বিভিন্ন রাজ্যে বিনা মূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার উল্লেখ করেছেন। কেউ কেউ বিভিন্ন ধরনের নগদ আর্থিক সহায়তা প্রকল্পের উল্লেখ করে বলেন, বাজেটে অর্থায়নের সংস্থান না রেখে এই ধরনের দান–খয়রাতি অর্থনীতির হাল ঝুরঝুরে করে দিচ্ছে। বিজেপিও গোয়া ও উত্তর প্রদেশে বিনা মূল্যে রান্নার গ্যাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমলারা বলেন, এই নীতি অর্থনৈতিক দিক থেকে টেকসই নয়। ভোটে জিততে দান–খয়রাতির প্রতিযোগিতা মারাত্মক ক্ষতিকর। এই প্রবণতা রুখতে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

সূত্র অনুযায়ী, দারিদ্র্য দূরীকরণে অভিনব ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিতে প্রধানমন্ত্রী আমলাদের অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় তাঁদের বিপুল অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে সরকারকে পরামর্শ দিতে তাঁরা যেন দ্বিধাগ্রস্ত না হন। ২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর শীর্ষ আমলাদের সঙ্গে এটা ছিল প্রধানমন্ত্রীর নবম বৈঠক।

Related Articles