অনুদানের টিকার আর্থিক মূল্য নির্ধারণ কোন যুক্তিতে: টিআইবি
বিনা মূল্যে পাওয়া টিকার আর্থিক মূল্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোন যুক্তিতে নির্ধারণ করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশ অনুদানের টিকা পেয়েছে। অনুদানে পাওয়া টিকার আর্থিক মূল্য কীভাবে কোন যুক্তিতে ঠিক করা হয়েছে, তা বোধগম্য নয়। টিআইবি আশা করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টিকা ক্রয় ও বিতরণ বাবদ খরচের হিসাব আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবে।
টিকা কেনাকাটা নিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে টিআইবির বাগ্যুদ্ধ চলছে। ঘটনার সূত্রপাত ১২ এপ্রিল। ওই দিন ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসন: অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। ওই প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছিল, কোভিড-১৯–এর টিকা কিনতে সরকার ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচের কথা বলেছে। কিন্তু টিআইবির হিসাব বলছে, যে পরিমাণ টিকা কেনা হয়েছে, তাতে খরচ হওয়ার কথা ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর মানে ২২ হাজার কোটি টাকার ফারাক রয়েছে।
টিআইবির জরিপের জবাব দিতে গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলন ডাকেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টিকা কেনায় খরচ হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। আর যে সাড়ে ৯ কোটি ডোজ টিকা আমরা ফ্রি পেয়েছি, সেটার আর্থিক মূল্য আমরা ২০ হাজার কোটি টাকা ধরেছি। এ টাকা আমাদের খরচ হয়নি। আমরা শুধু খরচটা ধরে যোগ করেছি। এমন নয় যে আমাদের ৪০ হাজার কোটি টাকাই খরচ হয়েছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই যুক্তির জবাবে আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলেছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আগে বলেছিলেন, টিকা কেনা বাবদ সরকারের মোট ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু টিআইবির গবেষণার ফলাফল প্রকাশের পর মন্ত্রী টিকার খরচ ২০ হাজার কোটি টাকার কথা বলেছেন, যা একদিকে তাঁর আগের ঘোষণার সংশোধন, অন্যদিকে টিআইবির বিশ্লেষণকেই যথার্থতা প্রমাণ করে।
টিআইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী টিকা কেনা বাবদ খরচ হওয়ার কথা ১৩ হাজার থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকার মধ্যে, যা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষিত ৪০ হাজার কোটির অর্ধেকের কম। টিকা ক্রয় ও বিতরণ বাবদ খরচের হিসাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও বিস্তারিত তুলে ধরবে বলে আশা করে টিআইবি।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, টিআইবি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছে। টিআইবির তথ্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন বলেও মন্তব্য করেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ বিষয়ে আজকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলেছে, টিআইবি মূলত দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ফলে টিআইবির বিরুদ্ধে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা বা দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করা দেশের কোনো সফলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অভিযোগ আনার কোনো সুযোগ নেই।
এত ছোট পরিসরে জরিপ করা ঠিক হয়নি, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে টিআইবি বলছে, বরাবরের মতো টিআইবির এই গবেষণায় জরিপ পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানবিজ্ঞানে বহুল–অনুসৃত মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছে। গবেষণায় বৈজ্ঞানিক মান ও পদ্ধতিগত উৎকর্ষ নিশ্চিত করতে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে একাধিক পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। গবেষণাকালে সংগৃহীত প্রতিটি তথ্য একাধিক উৎস থেকে সংগ্রহ করে যাচাই–বাছাইয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে এই গবেষণার ফলাফল সঠিক নয়—এমন অভিযোগ করার কোনো সুযোগ নেই। বরং এই গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখিত প্রতিটি তথ্য ও বিশ্লেষণ বিজ্ঞানসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, টিআইবির প্রতিবেদনকে ‘সঠিক নয় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যায়িত না করে, বরং টিআইবি কর্তৃক চিহ্নিত ঘাটতিগুলো দূর করা ও সুপারিশকৃত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই মহামারি নিয়ন্ত্রণে অধিকতর কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব। টিআইবি আশা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গবেষণায় উল্লেখিত ফলাফলকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে গ্রহণ করে সরকার তাদের সক্ষমতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে মনোযোগী হবে।