আল জাজিরা বলছে ‘পরিকল্পিত খুন’

আল জাজিরা বলছে ‘পরিকল্পিত খুন’

সরাসরি ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে’ কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার নারী সাংবাদিক শিরীন আবু আকলেহ’কে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরাইল। গুলিতে আহত হয়েছেন আলি সামুদি নামের আরও এক সাংবাদিক। তিনি জেরুজালেম  ভিত্তিক আল কুদস-এ কাজ করেন। তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত। গতকাল ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন এই সাহসী সাংবাদিকরা। এ সময় তাদের গুলি করা হয়। একে পূর্বপরিকল্পিত বলে অভিযোগ করেছে আল জাজিরা। ঘটনার সময় ইসরাইলি বাহিনী অভিযান চালাচ্ছিল পশ্চিম তীরে। সেই খবর কভার করতে গিয়েছিলেন শিরীন। তাকে হত্যার ঘটনায় ফিলিস্তিনসহ বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে

নিন্দা জানানো হয়েছে এই হত্যার। একই সঙ্গে দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিচার করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্ট জানিয়েছে তারা এর বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) যাবে। ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন মিডিয়া, অধিকার গ্রুপ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এর মধ্যে রয়েছে আল জাজিরা, ফিলিস্তিন সরকার, কাতার, ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, বৃটেন, চীন, ইরান, বেলজিয়াম, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রভৃতি। আল জাজিরা বলেছে, এই হত্যার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক আইন ও আদর্শকে ভঙ্গ করা হয়েছে। শিরীনের মৃত্যু হায়েনার অপরাধ। এই হত্যা করা হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে, যাতে মিডিয়া তার ম্যাসেজ পাঠাতে না পারে। এ হত্যার জন্য আমরা ইসরাইল ও তার দখলদার বাহিনীকে দায়ী করি। আল জাজিরার জেরুজালেম ব্যুরো প্রধান ওয়ালি আল ওমারি বলেছেন, এটা পরিষ্কার যে শিরীনকে ইসরাইলি স্নাইপাররা গুলি করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সাংবাদিকরা ছিলেন উন্মুক্ত স্থানে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী যেখানে অভিযান চালাচ্ছিল সেখান থেকে তারা দূরে ছিলেন। তা সত্ত্বেও তাদের ওপর গুলি করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে এই সাংবাদিককে গুলি করা হয়। তবে কোন পরিস্থিতিতে তাকে গুলি করা হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখে ধারণা করা হচ্ছে শিরীনের মাথায় গুলি লেগেছিল। আল-জাজিরা জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত শুধু তারা জানে যে, ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। শিরীন আবু আকলেহ জেনিন শহরে ইসরাইলি অভিযানের খবর সংগ্রহ করছিলেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে শিরীনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
এর আগে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছিল, তাদের উপরে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ফিলিস্তিনিরা হামলা চালালে তারা পাল্টা হামলা করতে বাধ্য হয়। পুরো বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্ত করা হয়েছে। তবে রামাল্লায় আল-জাজিরার ব্যুরো চিফ ওয়ালিদ আল-ওমারি জানান, ফিলিস্তিনি পক্ষ থেকে কোনো গুলির ঘটনা ঘটেনি।
আল-জাজিরার সাংবাদিক নিহতের খবরে শোক ও ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেক ফিলিস্তিনি। বৃটেনে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি দূত হুসাম জমলট বলেন, ইসরাইলি দখলদার বাহিনী আমাদের প্রিয় সাংবাদিক শিরীন আবু আকলেহকে হত্যা করেছে। শিরীন ছিলেন সব থেকে আলোচিত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক এবং কাছের বন্ধু। তিনি পরিচিতদের মধ্যে সাহসী ও দয়ালু হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ওদিকে এই সাংবাদিক হত্যার তদন্তে ইসরাইল যে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। এই হত্যার নিন্দা জানিয়ে কাতারের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী লোলওয়াহ আলখাতের বলেছেন, এই হত্যাই বলে দেয় ইসরাইলি মদতপুষ্ট সন্ত্রাসের কথা। তিনি ইসরাইলের প্রতি শর্তহীন সমর্থন বন্ধ করার আহ্বান জানান। নিন্দা জানিয়েছেন ইসরাইলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত টম নিডস। তিনি টুইটে এই হত্যাকে অত্যন্ত বেদনাদায়ক বলে আখ্যায়িত করে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। কড়া নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। টুইটারে তিনি বলেছেন, নির্যাতিতদের কথা যারা বলেন তাদের কণ্ঠকে স্তুব্ধ করে দিতে ইসরাইল ও ভারত যথাক্রমে ফিলিস্তিন এবং দখলিকৃত কাশ্মীরে ইচ্ছাকৃতভাবে কৌশল ব্যবহার করছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইসরাইল ও ফিলিস্তিন বিষয়ক পরিচালক ওমর শাকির বলেছেন, দখলদারিত্ব কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ইসরাইল সিস্টেমেটিকভাবে অগ্রসর হয়। এই হত্যা তারই অংশ। আমরা জানি ইসরাইল পর্যায়ক্রমিকভাবে অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করছে। নিন্দা জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস। তারা এ হত্যার কড়া নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তদন্ত দাবি করেছে। একই আহ্বান জানিয়েছেন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের সেক্রেটারি জেনারেল ও ডিরেক্টর জেনারেল ক্রিস্টোফার দেলোইর। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইসরাইল কর্র্তৃপক্ষকে অবশ্যই বেআইনি হত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে ইসরাইলকে জবাবদিহিতায় আনার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এই হত্যায় হতাশা প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস (এনইউজে)। তারা দ্রুত এ হত্যায় দায়ীদের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

Related Articles