তাজমহলের ২২টি বন্ধ ঘর আপাতত বন্ধই থাকছে। সেখানে কী আছে, তা খুলে দেখার অনুমতি পাওয়া গেল না। ফলে জানা যাবে না, বন্ধ কুঠুরিগুলোতে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে কি না। এলাহাবাদ হাইকোর্টের লক্ষ্ণৌ বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এই জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে দিয়েছেন। শুধু মামলা খারিজই নয়, দুই বিচারপতি ডি কে উপাধ্যায় ও সুভাস বিদ্যার্থী মামলাকারীকে ভর্ৎসনা করে বলেছেন, ‘জনস্বার্থ মামলাকে এভাবে উপহাসে পরিণত করবেন না।’ ক্রুদ্ধভাবে তাঁরা বলেন, ‘এরপর তো আমাদের চেম্বার খুলে দেখতে চাওয়া হবে, কী রয়েছে!’
ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য তাজমহলের ‘আসল ইতিহাস’ অনুসন্ধানের অভীপ্সায় দায়ের হয়েছিল এই মামলা। মামলাকারী অযোধ্যাবাসী। নাম রজনীশ সিং। বিজেপির ‘মিডিয়া ইনচার্জ’। তাঁর দাবি, পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম এই স্থাপত্যের অন্দরে ২২টি প্রকোষ্ঠ অনন্তকাল ধরে বন্ধ রয়েছে। সেই ঘরগুলো খোলা হোক। দেখা হোক তার অভ্যন্তরে কী কী আছে। তাঁর স্পষ্ট দাবি, আজ যার পরিচয় তাজমহল, তা আসলে ‘তেজো মহালয়’ নামে এক প্রাচীন শিবমন্দির, যার ওপরে নির্মিত হয়েছে তাজমহল। তাঁর আবেদন ছিল, তাজমহলের ‘প্রকৃত ইতিহাস’ অনুসন্ধানে দায়িত্ব দেওয়া হোক আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া বা এএসআইকে। তারাই বন্ধ ঘর খুলে দেখুক সেখানে কী লুকানো রয়েছে। পরীক্ষা করে দেখা হোক, কোনো হিন্দু মন্দিরের কাঠামোর ওপর মোগল সম্রাট শাহজাহান এই বিস্ময়কর স্থাপত্য নির্মাণ করেছিলেন কি না।
রজনীশের আইনজীবী রুদ্র বিক্রম সিংয়ের আরজি, বহু হিন্দু সাধুসন্তের বিশ্বাস, ওই খানে ছিল তেজো মহালয় নামে শিবমন্দির, যা ১২১২ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজা পরমর্দি দেব। এলাহাবাদ হাইকোর্টের লক্ষ্ণৌ বেঞ্চ গতকাল জানান, সত্য উদ্ঘাটনের দায়িত্ব ইতিহাসবিদদের ওপরেই থাকুক।
তাজমহল নিয়ে গত বুধবার আসর সরগরম করেন রাজস্থানের জয়পুর রাজপরিবারের রানি দীয়া কুমারীও। বিজেপির লোকসভা সদস্য জয়পুরের শেষ মহারাজা মান সিংয়ের এই নাতনির দাবি, যে জমিতে তাজমহল তৈরি, একসময় তা ছিল জয়পুর রাজপরিবারের। এ–সংক্রান্ত কাগজপত্রও তাঁদের রাজ পরিবারে রয়েছে। প্রয়োজনে তা দাখিলও করতে পারবেন। দীয়া কুমারী বলেন, ‘আমি বলছি না তাজমহল ভেঙে ফেলা হোক। কিন্তু সত্য উদ্ঘাটনে বন্ধ দরজা খোলা দরকার। সব রহস্য ওখানেই।’
কিন্তু সেই রহস্য উদ্ঘাটনে বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখালেন না দুই বিচারপতি। গতকাল শুনানির সময় আবেদনকারীকে তাঁরা বলেন, ‘এ নিয়ে তর্ক করতে হলে আপনি বাড়িতে আসুন। বৈঠকখানায় আপনারা স্বাগত। কিন্তু আদালতে নয়।’ আবেদনকারী তথ্য জানার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুললে বিচারপতি কটাক্ষ করে বলেন, ‘সেই গবেষণা করতেই পারেন। এমএ করুন, পিএইচডি করুন। গবেষণার বিষয় পছন্দ করুন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোন। কেউ যদি গবেষণার সেই অধিকার না দেয়, তখন আমাদের কাছে আসবেন।’