মেজর হলেন জীবনযুদ্ধে হার না মানা কানিজ ফাতেমা

মেজর হলেন জীবনযুদ্ধে হার না মানা কানিজ ফাতেমা

স্বপ্ন ছিলো সেনা কর্মকর্তা হবেন। আর সেই স্বপ্ন পূরণে ২০১১ সালে সেনাবাহিনীতে যোগন দেন কানিজ ফাতেমা। এর পর ৬৯ বিএমএ তে (বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমী) লং কোর্সের জন্য মনোনিত হন। যথারীতি ট্রেনিংও শুরু করেন। কিন্তু একটি দূর্ভাগ্য ঘটনায় শারীরিকভাবে চলাচলের অনুপযোগী হলে তার স্বপ্ন পূরণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কিন্তু শারীরিক অসক্ষমতা সত্বেও সেনাবাহিনীর উদারতায় ধাপে ধাপে প্রশিক্ষন শেষ করে বিশেষ বিবেচনায় কমিশন লাভ করেন। কমিশন লাভেল পর হুইল চেয়ারের সাহায্যে কর্মজীবনে নিজের সক্ষমতায় প্রমাণ করেন।

শনিবার (৪ জুন) সেই সক্ষমতায় মেজর পদে পদোন্নতি পেলেন নারী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ইতিহাসে অসুস্থতজনিত কারণে শারীরিক প্রতিবন্ধাকে হার মানিয়ে কোন নারী কর্মকর্তা মেজর হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার ঘটনা এই প্রথম।

আন্ত:বাহিনী জনসংযেগা পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ শনিবার ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল ফরমেশন কমান্ডারগণের উপস্থিতিতে এক আডম্বরপূর্ণ পরিবেশে, জীবন যুদ্ধে হার না মানা ক্যাপ্টেন কানিজ ফাতেমাকে মেজর পদবীতে উন্নীত করেন।

আইএসপিআর পরিচালক লে: কর্ণেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ জানান, ২০১১ সালে পরীক্ষার দিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন কানিজ ফাতেমা। ২০১২ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে মেজর কানিজের প্রশিক্ষণ চলাকালীন দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে মেরুদন্ডের হাড় ভেঙে যায়। দূর্ঘটনায় আহত কানিজ ফাতেমাকে সেনাবাহিনীতে রেখে দেওয়া হয়। বিশেষ বিচেনায় তিনি কমিশন লাভ করেন।

লে: কর্ণেল জায়েদ জানান, সেনা বাহিনী কানিজ ফাতেমাকে কমিশন দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেন। কর্মস্থলে সহকর্মীরাও এ নারী ক্যাপ্টেনকে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছিলেন। পক্ষাঘাতগ্রস্ত কানিজ ফাতেমা আজ শুধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নয় দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সকল নারী সমাজের জন্য একটি অনুকরণীয দৃষ্টান্ত।

আইএসপিআর জানিয়েছে, কানিজ ফাতেমা দেশ সেবার এক বুক স্বপ্ন নিয়ে ২০১১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। উল্লেখিত ঘটনার প্রেক্ষাপটে তার পক্ষে সেনাবাহিনীর কঠোর ও সুশৃংখল স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভবপর ছিল না। কিন্তু এই অকুতোভয় এ নারী কর্মকর্তা ভাগ্যের কাছে হার না মেনে দেশের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে যেতে দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কানিজ ফাতেমা’র এই অদম্য উদ্দীপনাকে সম্মান জানিয়ে সকল বাধা উপেক্ষা করে ৬৯ বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সের সাথে ২০১৩ সালে বিশেষ বিবেচনায় কমিশন প্রদান করে। পরবর্তীতে কানিজ ফাতেমা হুইল চেয়ারের সাহায্যে চলাফেরা করলেও নিজের অদম্য মানসিক শক্তি এবং সহকর্মীদের সহায়তায় দৈনন্দিন কার্যক্রম স্বতঃস্ফূর্ততার সাথে পালন করে আসছেন।

তার ইচ্ছাশক্তির কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হার মেনেছে পদে পদে। দেশ ও জনগণের আস্থার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক একজন অকুতোভয় নারীর প্রতি এ বিরল সম্মাননা দেশের প্রতিটি নারীর অগ্রযাত্রায় সর্বদা অনুকরণীয় এবং ইতিহাসের পাতায় উজ্জল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নারীর ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীতে ২০০০ সালে নিয়মিত বাহিনীতে সর্বপ্রথম নারী অফিসার নিয়োগ প্রদান শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সাল হতে নারী সৈনিকের সংযোজন, নারী অফিসারদের ইউনিট কমান্ড প্রদান, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী অফিসারদের নিয়োগসহ বিভিন্ন পদক্ষেপে দেশে নারী উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করেছে। সেনাবাহিনী প্রধানের নির্দেশে এই বিশেষ আয়োজন জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

উল্লেখ্য, কানিজ ফাতেমা কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার বিংলা বাড়ি গ্রামে ১৯৯০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম কালাম উদ্দিন সরকার ও মায়ের নাম ছালমা বেগম। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস হতে বিএসসি ইন মিলিটারি স্টাডিজ বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ২৪ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি হতে কমিশন লাভ করেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ পদাতিক ডিভিশনের অধীনস্থ ৩৩ এসটি ব্যাটালিয়নে কর্মরত রয়েছেন।

Related Articles