জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হলেন রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হলেন রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদে নিয়োগ পেলেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। মহাসচিব অ্যান্তোনিয়ো গুতিরেজ ৯ জুন বৃহস্পতিবার এ ঘোষণা প্রদান করেছেন।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা একইসাথে স্বল্পোন্নত দেশ, ভূবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহের শীর্ষ প্রতিনিধি (Under-Secretary-General and High Representative for the Least Developed Countries, Landlocked Developing Countries and Small Island Developing States) হিসেবে আন্তর্জাতিক এ ফোরামে কাজ করবেন। একইপদে ২০০২ সালের মার্চে নিয়োগ পেয়েছিলেন বাংলাদেশের আরেক মেধাবি কূটনীতিক আনোয়ারুল করিম চৌধুরী।

অর্থাৎ বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিসের নারী হিসেবে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা এই পদে প্রথম হলেও বাংলাদেশের দ্বিতীয় কূটনীতিক। এ নিয়োগে বিশ্ব সংস্থায় বাংলাদেশের বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বের স্বীকৃতি মিললো এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নিবিড় অংশগ্রহণ ও বাংলাদেশী পেশাদার কূটনীতিকদের গ্রহণযোগ্যতারই বহি:প্রকাশ বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা।
উল্লেখ্য, এই মূহুর্তে জাতিসংঘ সিস্টেমে একজন বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমাই হতে যাচ্ছেন সর্বোচ্চ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি।

নিয়োগের বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের ঘোষণার পর নিজের অনুভূতি প্রকাশকালে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, “আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ।

তিনি আমাকে এ সুযোগ করে দিয়েছেন। আমার উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে তিনি আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। আমি জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি কৃতজ্ঞ। স্বল্পোন্নত দেশ, ভূবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহের উচ্চ প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আমার উপর যে গভীর আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেছেন, আমি কাজের মাধ্যমে তার প্রতিফলন দেখাতে চাই”।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে রাবাব ফাতিমা জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ দায়িত্ব গ্রহণের আগে তিনি জাপানে (২০১৬-২০১৯) রাষ্ট্রদূত ছিলেন। আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে স্থায়ী প্রতিনিধি থেকে বিদায় নেবেন রাবাব ফাতিমা। অর্থাৎ এ পদে নতুন একজনকে নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত সে সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সিভিল সার্ভিসে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার রয়েছে ৩০ বছরেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা যেখানে তিনি দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কূটনীতি, নীতি নির্ধারণ, অ্যাডভোকেসি, কর্মসূচি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে রাবাব ফাতিমা জাতিসংঘ শান্তিবিনির্মাণ কমিশনের সভাপতি, ইউএন উইমেন এক্সিকিউটিভ বোর্ড প্রেসিডেন্ট এবং ৭৬তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সহ-সভাপতির মতো মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এলডিসি-৫ এর প্রস্তুতিমূলক কমিটির কো-চেয়ার, ইউনিসেফ এক্সিকিউটিভ বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ও ইউএনডিপি, ইউএনএফপিএ এবং ইউএনওপিএসের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

পেশাদার কূটনীতিক রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র সার্ভিসে যোগদান করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি নিউইয়র্ক ও জেনেভাস্থ জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং কোলকাতা ও বেইজিং এ বাংলাদেশ দূতাবাসে দায়িত্ব পালন করেন।

মানবাধিকার বিষয়াবলীতে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার রয়েছে ব্যাপক অভিজ্ঞতা। লন্ডনস্থ কমনওয়েলথ্ সেক্রেটারিয়েটে মানবাধিকার বিভাগের প্রধান; আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক প্রতিনিধি এবং একই সংস্থার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিবাসন বিষয়ক আঞ্চলিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করার সূদীর্ঘ অভিজ্ঞতাও রয়েছে এই কূটনীতিকের।

তিনি টাফ্টস ইউনিভার্সিটির ফ্লেচার স্কুল অফ ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে রাবাব ফাতিমা বিবাহিত এবং এক কন্যা সন্তানের জননী। তার জীবনসঙ্গী কাজী ইমতিয়াজ হোসেনও পেশাদার কূটনৈতিক। বর্তমানে কাজী ইমতিয়াজ গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

Related Articles