বেইজিংয়ের কঠোর জবাবের ভয়ে তাইওয়ান ইস্যুতে আবারও পিছু হটলো ওয়াশিংটন

বেইজিংয়ের কঠোর জবাবের ভয়ে তাইওয়ান ইস্যুতে আবারও পিছু হটলো ওয়াশিংটন

অবশেষে তাইওয়ানে মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সম্ভাব্য সফর নিয়ে সৃষ্ট বেইজিং-ওয়াশিংটন উত্তেজনা জোরদারের প্রেক্ষাপটে দৃশ্যত ওই সফরের কর্মসূচি বাদ দিয়েছেন পেলোসি।

তিনি আজ রোববার এক ঘোষণায় জানিয়েছেন যে কংগ্রেসের একদল প্রতিনিধি তার নেতৃত্বে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সফর করবেন এবং এই সফরে তারা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

মিত্র দেশগুলোর প্রতি দেয়া মার্কিন অঙ্গীকারগুলোর বিষয়ে ওয়াশিংটনের অবিচল থাকার বিষয়টি তিনি এ সফরে বন্ধুদের কাছে তুলে ধরবেন বলে উল্লেখ করেছেন। পেলোসি তার বক্তব্যের কোথাও তাইওয়ানে সফরের বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি। হোয়াইট হাউজও ঘোষণা করেছেন যে তারা তাইওয়ানে পেলোসির সফরের সমর্থক নন।

হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্বাস করেন যে পেলোসিকে তাইওয়ান সফরের পরামর্শ দেয়ার বা না দেয়ার ব্যাপারটির সঙ্গে বাইডেনের কোনো সম্পর্ক নেই। বাইডেন বলেছেন, মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী মনে করে যে বর্তমান সময়টা তাইওয়ান সফরের জন্য উপযুক্ত সময় নয়।

এর আগে চীন তাইওয়ানে স্পিকার পেলোসির সফরের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারিমূলক অনেক বার্তা দিয়ে বলেছে, সম্ভাব্য এই সফর হবে চীনের রেডলাইনের প্রতি চ্যালেঞ্জ এবং চীন এ ধরনের পদক্ষেপের পাল্টা কঠোর জবাব দিবে। ওই সফরের ফলে দু দেশের সম্পর্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে; এমনকি সামরিক সংঘাতও শুরু হতো পারে বলে আভাস দিয়েছে চীন।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাইওয়ান ইস্যুতে যে কোনো ধরনের উস্কানি দেয়া হতে বিরত থাকতে ওয়াশিংটনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যারা আগুন নিয়ে খেলবে আগুনে তাদেরই হাত পুড়ে যাবে।

চীনের সেনাবাহিনীও গত কয়েক মাসে তাইওয়ানের কাছে বেশ কয়েক বার বিমান ও নৌ-মহড়া চালিয়েছে। এমনকি এই দ্বীপটির কাছে চীনা ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্রও মোতায়েন করেছে তারা। চীনের দিক থেকে এইসব কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখেই ন্যান্সি পেলোসি এশিয়ায় তার সফরের কর্মসূচি থেকে তাইওয়ানকে বাদ দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

মার্কিন সরকার প্রায়ই তাইওয়ানের কাছে নানা ধরনের সমরাস্ত্র বিক্রি করছে ও ওই অঞ্চলে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ পাঠাচ্ছে। ফলে তাইওয়ানের ওপর চীনের কর্তৃত্ব তথা বেইজিংয়ের এক চীন নীতির প্রতি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হচ্ছে। তাই চীনা প্রেসিডেন্টও তাইওয়ানে মার্কিন সরকারের দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তা তথা ন্যান্সি পেলোসির সম্ভাব্য সফরের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিতে বাধ্য হয়েছেন।

মার্কিন সরকার চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালে ঘোষণা করেছিল যে ওয়াশিংটন তাইওয়ানকে একটি স্বাধীন দেশ বলে মনে করে না। সেই থেকে চীনের ঘরোয়া বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের উপর্যুপরি হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও মার্কিন সরকারগুলো নানা আঞ্চলিক জোট গঠনের মাধ্যমে চীনকে কোণঠাসা করার ও তাইওয়ানে হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে এবং তাইওয়ানের সঙ্গে স্বাধীন রাষ্ট্রের মত আচরণ করছে।

তবে উইলিয়াম এইচ ওভারহল্ট-এর মত কোনো কোনো মার্কিন বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের সামরিক ক্ষমতা এত উঁচু পর্যায়ে চলে গেছে তাইওয়ানকে রক্ষার সম্ভাব্য কোনো যুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর বিজয়ের গ্যারান্টি দেয়া সম্ভব নয়।

অন্যদিকে চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট অতীতের যে কোনো চীনা কমিউনিস্ট নেতার চেয়েও বেশি মাত্রায় তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার ব্যাপারে জোর দিয়ে আসছেন। তবে চীন তাইওয়ানকে পুনরায় চীনের কর্তৃত্বাধীনে আনতে চাইলেও বেইজিং একটি রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্যমেই তা করতে চায় না, কারণ তাতে চীনের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়বে বা ভয়াবহ বিপর্যয়ের শিকার হবে। #

পার্সটুডে

Related Articles