পটিয়ায় ছেলে মাইনুল ইসলামের ছোড়া গুলিতে প্রাণ হারানো প্রবাসী মাতা জেসমিন আক্তার (৫৫)। থাকতেন অস্ট্রেলিয়ায়। রোজায় দেশে এসেছিলেন। গত ১৩ জুলাই হারিয়েছেন স্বামী শামসুল আলম মাস্টারকে। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পটিয়া পৌরসভার প্রথম মেয়র ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর কারণে অস্ট্রেলিয়া যেতে বিলম্ব হয় জেসমিনের। আগামী ২ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার যাওয়ার কথা ছিল। তবে মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) ছেলে মাইনুল ইসলামের (৩০) গুলিতে নিহত হন তিনি।
নিহতের বড় মেয়ে শায়লা শারমিন নিপা দাবি করেন, ‘মাইনুল মাদকাসক্ত ছিল। বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি নিজ নামে লিখে নিতে মাকে বাধ্য করতে গিয়ে গুলি করে।’
ভাইয়ের ছোড়া গুলিতে মা হারানো নিপা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মায়ের লাশের পাশে কান্না করছিল। সে সময় সে সাংবাদিকদের বলে, ‘আমার মা সকালে সোনালী, জনতা ও ব্র্যাক ব্যাংক পটিয়া শাখায় যান। বাবার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নমিনি ছিলেন মা। বাবার মৃত্যুর পর মা ব্যাংকে গিয়ে টাকা-পয়সা কত আছে তা যাচাই করেন। তিনি ব্যাংক থেকে দুপুরে বাড়িতে আসার পর মায়ের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে মাইনুল। সে বলে, তাকে না বলে কেন মা ব্যাংকে গেছে। এই নিয়ে ঝগড়া শুরু করে। এর মধ্যে সম্পত্তি যা আছে সবটুকু তার নামে লিখে দিতে চাপ দেয়। এতে মা রাজি না হলে অস্ত্র বের করে। প্রথম গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ঘরের দেয়ালে লাগে। এরপর আরেকটি গুলি করে। সেটি মায়ের চোখে লাগে। ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়। গুলি করে মাইনুল পালিয়ে যায়। মাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১৩ জুলাই অসুস্থতার কারণে বাবা মারা যান। আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম মাস্টার। বাবার মৃত্যুর পর অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে ওঠে মাইনুল। মা-বাবার দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে মাইনুল মেজো। ছোট ভাই মাশফিকুর রহমান মাশফি অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। সেখানে লেখাপড়া করে। মাও অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। দেশে বেড়াতে এসেছেন।।
প্রতিবেশিরা বলেন, ‘জেসমিন আক্তার অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। গত ২০ রমজান তিনি দেশে আসেন। আগামী ২ সেপ্টেম্বর পুনরায় অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাওয়ার কথা ছিল। আরও আগে যাওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে স্বামী শামসুল আলম মাস্টার মারা যাওয়ায় ঠিক সময়ে যেতে পারেননি। স্বামীর মৃত্যুর চল্লিশ দিন পর তিনি অস্ট্রেলিয়ায় চলে যেতেন।’
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুর পৌনে ২টার দিকে পটিয়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ ঘরে ছেলের গুলিতে নিহত হন জেসমিন আক্তার। মাইনুল চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকায় থাকেন। তিনি বিবাহিত। যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন বলে এলাকার লোকজন দাবি করেন।
এদিকে, বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হকসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার পটিয়া নিউজকে বলেন, ‘বড় ছেলে মাইনুলের গুলিতেই নিহত হয়েছেন। গুলিটি লেগেছে বাম চোখে। ঘর থেকে কয়েকটি ব্যবহৃত গুলির খোসা ও তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে পলাতক মাইনুল ইসলাম। আমরা তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।’
ওসি আরও বলেন, ‘সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।’
পটিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘মাইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।’