পটিয়ায় নজির রেখে চলেছে নজির আহমদ ফাউন্ডেশন; ফোন পেলেই পৌঁছে যাচ্ছে মানবিক সহায়তা

পটিয়ায় নজির রেখে চলেছে নজির আহমদ ফাউন্ডেশন; ফোন পেলেই পৌঁছে যাচ্ছে মানবিক সহায়তা

এ,টি,এম,তোহা: পটিয়া : :শুক্রবার। সকাল ১১ টা। নজির আহমদ দোভাষ ফাউন্ডশনের মানবিক কর্মকান্ডে ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে কল আসে। বিপরীত থেকে সহায়তা চান প্যরালাইসডে আক্রান্ত নুর জাহান (৬০)। কল দেওয়ার আধা ঘন্টার মধ্যে ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক টিম নুর জাহানের জন্য নিয়ে যান মানবিক সহায়তা। হাতে তুলে দেন নগদ অর্থ। চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুর জাহান (৬০)।

প্যারালাইসে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় মৃত্যুশয্যায়। দিনমজুর স্বামী আবদুস সালামের দুই সংসারের পরিবারের সদস্য রয়েছে ৬ জন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামী বর্তমানে বয়সের ভারে সময় কাটছে। দুই সংসারের এক ছেলে চার মেয়ে নিয়ে পরিবারে যেন এক মানবেতর জীবন পার করছেন। শুক্রবার সকালে প্রতিবেশী নুরুল হুদা মামুনকে দু:খের কথা জানিয়েছেন নুর জাহানের স্বামী আবদুস সালাম। মামুন মোবাইলে যোগাযোগ করে নজির আহমদ ফাউন্ডেশনের সাথে। একইদিন তার এক ঘন্টার ব্যবধানে ফোন আসে রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত অসহায় ওসমান গনির। পরে টিম নজির আহমদ ফাউন্ডেশন চলে যান ওসমান গনির পরিবারে। দিয়ে আসেন নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা।

এভাবে নুর জাহানদের মতো উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন ও পটিয়া পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রতিনিয়ত মানবিক সহায়তা প্রদান করে নজির সৃষ্টি করে যাচ্ছে নজির আহমদ দোভাষ ফাউন্ডেশন। অর্থ সহায়তার পাশাপশি তারা প্রায় প্রতিদিন দিয়ে যাচ্ছে বস্ত্র, খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীও।

আমেরিকা প্রবাসী ও সাবেক মেধাবী ছাত্রনেতা ড. জুলকারনাইন চৌধুরী জীবন নিজের দাদার নামে প্রতিষ্ঠা করেন নজির আহমদ দোভাষ ফাউন্ডশেন। এ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মানবিক সহায়তায় কাজে সম্পৃক্ত প্রায় ২০ জন সেচ্ছাসেবক। তারাই মানিবক সহায়তা নিয়ে ছুটে যান দু:খে কষ্টে থাকা মানুষের বাড়িতে বাড়িতে। নজির আহমদ দোভাষ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. জুলকারনাইন চৌধুরীর বাড়ি উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নে। তার পিতার নাম আবু বক্কর চৌধুরী।

সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান জুলকারনাইন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর বীরমুক্তিযোদ্ধা সুলতান আহমদ কুসুমপুরীর নিকটআত্মীয় এবং স্থানীয় কুসুমপুরা ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া ডালিমের ফুফাতো ভাই। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় থেকে মার্ষ্টাস ডিগ্রি সম্পন্ন করা জুলকারনাইন ১৫ বছর আগে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। পরে তিনি প্রাণ রসায়ন বিভাগের উপর যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস থেকে পিএইচডি ডিগ্রিও অর্জন করেন।

জানা যায়, গত ২০২০ সালের মার্চ মাসে শুরু হওয়া সারাবিশে^র কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস মহামারীর সময়ে অসহায় ও সাধারণ মানুষের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী ও মাংস বিতরনের মাধ্যমে এ ফাউন্ডশনের যাত্রা শুরু হয়। প্রথমদিক থেকে উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নে কার্যক্রম চললেও পরবর্তীতে তা পুরো পটিয়ায় বিস্তৃতি ঘটে। বিশেষ করে গত ৬ মাস ধরে এ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম চোখে পড়ার মত। যাত্রার শুর থেকে এ পর্যন্ত পুরো পটিয়ায় মানবতার সেবায় দীক্ষা নিয়ে সামাজিক ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে প্রায় ১০ হাজারের অধিক লোককে খাদ্য সামগ্রী, চিকিৎসা ব্যয়, শিক্ষা সহায়তা, প্রায় দুইশতাধিক পরিবারকে গৃহ নির্মাণ সামগ্রী এবং মাংস বিতরণ করা হয়। প্রায় ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ইতোমধ্যে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির অনন্য উদাহরণ হিসেবে হিন্দু ধর্মাবলাম্বীদের দূর্গাপূজা এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলাম্বীদের প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসবে উপজেলার বিভিন্ন মন্ডপ ও বিহারে বস্ত্র বিতরন করা হয়।
নজির আহমদ ফাউন্ডেশনের সেচ্ছাসেবক নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘গত এক সপ্তাহে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রায় ৩শ জনকে মানবিক সহায়তা প্রদান করেন। অসচ্ছল পরিবার, মানবেতর জীবনযাপন করা ব্যক্তিদের দেওয়া হয় অর্থ সহায়তা ও খাদ্য সামগ্রী, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় শিক্ষা সামগ্রী। রোগে আক্রান্তদের অর্থ সহায়তার পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে চিকিৎসা সামগ্রীও। আমাদের মোবাইল সহায়তা নাম্বারে (০১৮১৭৭৪০৪৩৫) ফোন পাওয়ার পর ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ যাচাই করে তাদের নিকট পৌছে দেওয়া হয় মানবিক সহায়তা।’

কুসুমপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকারিয়া ডালিম জানিয়েছেন, ‘নজির আহমদ ফাউন্ডেশন আমার এলাকার কৃতি সন্তান হলেও এ ফাউন্ডশনের কর্মকান্ড পুরো উপজেলায় বিস্তৃত। তারা ফোন পাওয়ার সাথে সাথে সহায়তা নিয়ে যাচ্ছেন মানুষের নিকট। জুলকারনাইনের মতো মহৎ ও মানবিক মানুষ বর্তমান সমাজে খুঁেজ পাওয়া কঠিন। তিনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে নিজেই ভোগবিলাস করতে পারতেন। তা না করে তিনি সার্বক্ষনিক মানবিক চিন্তা চেতনা তার মধ্যে কাজ করায় আজ সমাজ উপকারভোগী’।

নজির আহমদ দোভাষ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও প্রাণরসায়ন গবেষক ড.জুলকারনাইন চৌধুরী বলেছেন, ‘আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন এ মানবিক কর্মকান্ড চলমান থাকবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে স্বপ্ন গ্রাম হবে শহর এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কাজ করে যাচ্ছেন এতে আমাদের সকলকে সহযোগীতার হাত বাড়াতে হবে। এতে করে একটি মানবিক রাষ্ট্র ও উন্নতর জীবন গড়ে তুলতে পারবো।’

পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল মামুন সমকালকে জানান, ‘এ ধরনের মানবিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে আমরা একটি সুন্দর সমাজ গঠন করতে পারবো। ভালো কাজ করা হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে’।

Related Articles