পটিয়ায় প্রবাসীর সমন্বিত মৎস্য খামারে উৎসাহিত এলাকার হাজারো তরুণ 

পটিয়ায় প্রবাসীর সমন্বিত মৎস্য খামারে উৎসাহিত এলাকার হাজারো তরুণ 

এ,টি,এম, তোহা পটিয়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা : পটিয়ায় সমন্বিত মৎস খামার করে এলাকার তরুণদের কাছে আইডল হিসেবে অনুপ্রানিত হয়েছে হাজারো তরুণ। প্রবাসী এই কৃষি ও মৎস্য উদ্যোক্তাকে অনুকরণ করে এলাকায় বেকারত্ব দূরীভূত হয়ে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। তার খামার এলাকার তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পেলেছে। ৫ একর জায়গায় ৬ টি পুকুরে সারা বছরই চাষ হয় নানা জাতের মাছ।

রুই-কাতল, মৃগেল, সরপুটি, কালা বাউস, সাদা বাউস, কার্প জাতীয় মাছ এবং দেশীয় শিং, মাগুর ও চিংড়ি। প্রতিদিনই অসংখ্য তরুণ এই খামার পরিদর্শনে দুর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন। তার দেখাদেখি এলাকায় গড়ে উঠেছে আরো প্রায় ১০টি খামার। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই উদ্যোক্তা সপরিবারে সেখানকার নাগরিক। নাড়ির টানে নিজ মাতৃভূমি পটিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল কুসুমপুরা এলাকায় গড়ে তুলেছেন সমন্বিত মৎস্য খামার। যে খামারে আছে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী, নানাজাতের ফলজ ও সবজি । যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ইউনিভার্সিটির বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকিউলার বিষয়ের অধ্যাপক ড. জুলকারনাইন স্কলারশিপ নিয়ে ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান । আমেরিকায় উচ্চতর ডিগ্রি শেষে টেক্সাস ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা ও গবেষণায় জড়িত হওয়ার পাশাপাশি গড়ে তোলেন পারিবারিক ব্যবসা।
প্রবাসী হলেও সামাজিক দায়বদ্ধতা ভুলেননি ড. জুলকারনাইন। কারণ চাচা সুলতান আহমদ কুসুমপুরী ছিলেন বঙ্গবন্ধু সরকারের এমপি। নিজেও চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। সে কারনে এলাকায় দাতব্য সংস্থ্যা গড়ে তুলেন দাদা নজির আহমদের নামে। নাম দেন নজির আহমদ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এলাকায় গরীর,দুস্থ, অসুস্থ ও মেধাবী গরিব শিক্ষার্থীদের সারা বছরই সাহায্য দিয়ে আসছেন।
যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের সেবায় উপজেলার যে কোনো প্রান্তে ছুটে যান সাহায্য নিয়ে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সব খরচ তিনি জোগান। তার খামারের কাজ করা শ্রমিকদের জন্য গড়ে তুলেছেন আবাসিক এলাকা। শ্রমিক ও তাদের সন্তানদের পড়াশোনা ও চিকিৎসার ব্যয় তিনি বহন করেন। করোনা ভাইরাসের মধ্যেও তিনি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বেকারদের কর্মসংস্থান, অর্থের অভাবে কেউ মেয়ের বিয়ে দিতে না পারলে তার বিয়ের ব্যবস্থা, অসুস্থদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে যাচ্ছেন তিনি। বেকার তরুণদের কর্মসংস্থান করে দিচ্ছেন। গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি ও মাছচাষ বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দেন তিনি।
খামারটির ম্যানেজার নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, দাতব্য প্রতিষ্ঠানের খরচ নির্বাহের জন্য তিনি গড়ে তুলেছেন নজির আহমদ ফাউন্ডেশন এগ্রো ফিসারিজ। স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শে গড়ে তুলেছেন নানান জাতের ফল। সরেজমিন তার খামারে গিয়ে দেখা যায় পুকুর পাড়ে সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো আছে পেঁপে, বিভিন্ন জাতের কলা, মিষ্টি ও টক বরই, লেবু, জাম্বুরা, আমড়া, বেলুম্বু। প্রায় প্রতিটি গাছেই ফল ধরেছে। তাছাড়া চাষ হচ্ছে বেগুন, ধনে, নানা জাতের শাক, মরিচ,ধনে পাতা। তার নিকটাত্মীয় খামারের তত্বাবধায়ক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকারিয়া ডালিম জানিয়েছেন, এই খামারে বছরে অর্ধকোটি টাকার মাছ, ফল ও সবজি বিক্রি হয়। বিষমুক্ত এইসব ফল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হয়না। এলাকার লোকজন ছাড়াও স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ খামারে এসে মাছ মাংস দুধ, সবজি, ফল কিনে নিয়ে যায়।
খামারটির মালিক প্রবাসী ড. জুলকারনাইন জানিয়েছেন, খামারের আয়ের একটি অংশ কর্মচারীদের বেতন ব্যয়ের পর যা লাভ হয় তার পুরোটাই তার দাদার নামে পরিচালিত নজির আহমদ আহমদ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে গরীবদের দান করে দেয়া হয়। করোনাকালে প্রায় ১০ হাজার লোককে খাদ্য ও ঔষধ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। মানবতার তাগিদ থেকেই দেশে তিনি খামার গড়ে তুলেছেন। কারো কথায় কর্ণপাত না করে তিনি দিনরাত পরিশ্রম করে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন একটি সমন্বিত খামার। একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের সেরা মাছচাষির পদক ।

Related Articles