জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে মহাকাশের ছবি ও পবিত্র কুরআনিক তথ্য…এ,টি,এম,তোহা

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে মহাকাশের ছবি ও পবিত্র কুরআনিক তথ্য…এ,টি,এম,তোহা

এ,টি,এম,তোহা : আজ একটা কঠিন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। পৃথিবীর এ যাবৎ কালের ব্যয়বহুল ক্যামেরা “জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ” দিয়ে নাসা ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি ধারণ করে সেটা পৃথিবীতে পাঠিয়েছে।

অর্থাৎ আমরা এই বিশ্ববাসী আজ থেকে ১৩০০ বছর আগে ফিরে গিয়েছি। আর এই ছবির মাধ্যমে আমরা এই বিশ্বের আদি কিছু নিদর্শন দেখতে পেয়েছি।

১২ জুলাই সোমবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নাসার বিজ্ঞানীদের নিয়ে এই অভূতপূর্ব ছবি প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববাসী আমরা আজ থেকে ১৩০০ কোটি বছর আগে ফিরে যাচ্ছি। সে সময় কেমন ছিল এই মহাকাশ দেখুন।

যে ক্যামরা দিয়ে এই ছবি তোলা হয়েছে সেই জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ এখন রয়েছে পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে।এর আগে নাসা আরেকটি ক্যামরা টেলিস্কোপ পাঠিয়েছিল যেটি ৫৫০ কিলোমিটার গিয়ে সেটি অকার্রকর হয়ে যায়।

আজ জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের যে সাফল্য সেটি শুরু হয়েছিল ১৯৯০ দশকে। তার জন্য বাজেট ধরা হয়েছিল ১০০ কোটি ডলার।২০২১ সালে এসে সেই জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের খরচ দাড়ায় ১০০০ হাজার ডলারে।

আমেরিকার সামর্থ থাকা সত্বেও ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইএসএ) এবং কানাডার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (সিএসএ) নাসাকে সহযোগিতায় এগিয়ে না এলে হয়তো এটা সাফল্যের মুখ দেখতোনা।

১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে পৃথিবী এবং সূর্যের তাপ থেকে বাঁচাতে ৫টি পর্দা লাগানো হয়েছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে। এক-একটি পর্দার মাপ টেনিস কোর্টের সমান।

এই টেলিস্কোপে রয়েছে ১৮টি ষড়ভুজ আয়না। যার সম্মিলিত ব্যাস ৬.৫ মিটার। ঠিক যেমন ভাবে রাতের আঁধারে কোনও কোনও ফুল পাপড়ি মেলে সে ভাবেই ১৮টি আয়না মহাকাশে উন্মীলিত হয়েছে।তা দিয়েই চলেছে মহাকাশে অতীতের খোঁজ।

কী আছে ছবিতে ?

মাত্র ২৯ কোটি আলোকবর্ষ দূরের ৫টি গ্যালাক্সির ছবি এমন গ্যালাক্সি হাজার হাজার কোটি আলোকবর্ষ দূরেও আছে।

আড়াই হাজার আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্রের ছবিতে দেখা চারদিকে গ্যাসের ধোঁয়া ছাড়ছে।

পবিত্র কুরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘ভূপৃষ্ঠ নির্মাণের কাজ সমাধার পর তিনি আকাশ নির্মাণের দিকে মনোনিবেশ করলেন আর তখন তা ছিল ধোঁয়াশাঘেরা।-সুরা : ফুসিসলাত, আয়াত : ১১

প্রথমবারের মতো আমেরিকান মহাকাশ গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান নাসা এ তথ্য সরবরাহ করেছিল যে মহাশূন্য খুব গভীর ধোঁয়াশাচ্ছন্ন।

খুব সকালে সূর্যের রশ্মি ও রাতে তারার আলোতে যে বিচ্ছুরণ সৃষ্টি হয় তা মূলত এই ধোঁয়াশার কারণেই হয়।

যেমন—কুয়াশাঘেরা পরিবেশে বাতির আলো ভিন্ন ধরনের রশ্মি বিচ্ছুরণ সৃষ্টি করে।
এবার আসুন জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের ছবি এবং পবিত্র কুরআনে মহাকাশ তত্ব নিয়ে কী আছে।

মহাকাশ তারকাবেষ্টিত…

মহাকাশবেষ্টিত তারকাগুলো প্রধানত দুই ধরনের। রাতের ঝলমলে আকাশে আমরা যেগুলো মিটমিট করে জ্বলতে দেখি কোরআনের ভাষায় এগুলো ‘কাউকাব’ তথা স্টার শব্দে ব্যবহৃত হয়েছে।

এ ছাড়া মহাকাশে একধরনের বৃহৎ আকৃতির তারকা রয়েছে, যেগুলো স্বয়ং বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ, উপগ্রহ ও তারকার সমষ্টি।

কুরআনের ভাষায় এগুলো ‘বুরুজ’ তথা গ্যালাক্সি শব্দে ব্যবহৃত হয়েছে।

প্রথম প্রকারের বিবরণে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আমি দুনিয়ার আকাশ অসংখ্য তারকারাজির দ্বারা সুসজ্জিত করেছি। সুরা : সাফফাত, আয়াত : ৬

দ্বিতীয় প্রকার প্রসঙ্গে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, পবিত্র সেই মহান সত্তা, যিনি মহাকাশে অসংখ্য গ্যালাক্সি স্থাপন করেছেন যাতে সূর্য ও আলোকোজ্জ্বল চন্দ্রও স্থাপন করেছি। -সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৬১

বৈচিত্র্যময় মহাকাশ…

নীল আকাশ বলে মানুষের মুখে পরিচিত হলেও বাস্তবে আকাশের সুনির্দিষ্ট কোনো রং নেই। বায়ুমণ্ডলের ক্ষুদ্র অণুগুলো দৃষ্টিসীমার প্রান্তে নীল হয়ে দেখা দেয়।

অবস্থাভেদে আকাশ বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে। আবার রংধনুর মেলায় একই সঙ্গে সাত রঙেও সেজে ওঠে।

আকাশের এই বৈচিত্রময় সজ্জার বর্ণনা পবিত্র কোরআনে এভাবে এসেছে। ‘কসম ওই আকাশের, যা বিভিন্ন রূপে আত্মপ্রকাশ করে। সুরা : তারিক, আয়াত : ১১

কক্ষপথ বিশিষ্ট মহাকাশ…

পবিত্র কোরআনের ভাষায় এর আলোচনা এসেছে সুরা জারিয়াতের ৭ নম্বর আয়াতে ‘জাতুল হুবুক’ তথা রাস্তা বা পথবিশিষ্ট শব্দে।

মহাকাশের ছোট-বড় গ্রহ-উপগ্রহগুলো প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে ঘূর্ণমান।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সূর্য তার নির্ধারিত পথে ছুটে চলে। চাঁদেরও রয়েছে নির্ধারিত কক্ষপথ-সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৩৮, ৩৯

মহাকাশের কয়টি স্তর ?

পবিত্র কুরআনে এক হাজার ৫০০ বছর আগেই মহাকাশের সাতটি স্তরের তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। সুরা মুমিনুনের ১৮ নম্বর আয়াতে ‘সাবআ তরাইক’ শব্দে, সুরা মুলকের তিন নম্বর আয়াতে ‘তিবাকা’ শব্দে এবং সুরা নাবার ১২ নম্বর আয়াতে ‘সিদাদা’ শব্দে মহাকাশের সপ্তস্তরের বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞান মহাকাশের সাতটি স্তর আবিষ্কার করেছে।

বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় এগুলোর নামকরণ করা হয়েছে এ রকম—১. ট্রাপোস্ফিয়ার। ২. স্ট্রাটোস্ফিয়ার। ৩. ওজনোস্ফিয়ার। ৪. মেসোস্ফিয়ার। ৫. থার্মোস্ফিয়ার। ৬. আয়নোস্ফিয়ার। ৭. এক্সোস্ফিয়ার।

আসমান কীসের উপর দাঁড়িয়ে?

যেখানে শূন্যের ওপর এক টুকরা টিস্যু পেপারের অস্তিত্বও কল্পনা করা যায় না। সেখানে এত বিশাল মহাকাশ মহাশূন্যের মাঝে কিভাবে ভাসমান থাকতে পারে?

জবাব আল্লাহ তাআলা নিজেই দিচ্ছেন, ‘তার নিদর্শনাবলি থেকে এটাও একটি যে আসমান-জমিন কেবলমাত্র তাঁর আদেশের ওপরই দাঁড়িয়ে আছে। সুরা : রোম, আয়াত : ২৫।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সাত আসমান আমি খুঁটিবিহীন ভাসমান অবস্থায় সৃষ্টি করেছি, যা তোমরা দেখছ।- সুরা : লুকমান, আয়াত : ১০

মহাকাশ দরজা বিশিষ্ট…

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন ‘যারা অহংকারবশত আমার নিদর্শনাবলি অস্বীকার করে তাদের জন্য আকাশের দরজা উন্মোচিত হবে না। আবার এসব দরজায় রয়েছে শক্ত পাহারার ব্যবস্থা।

আল্লাহতাআলা বলেন, ‘মহান আল্লাহ, যিনি মাত্র দুই দিনে মহাকাশে সপ্তস্তর নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করেছেন।

প্রতিটি স্তরের কার্যক্রম বিন্যস্ত করেছেন। এবং পৃথিবীর আকাশ অসংখ্য আলোকবাতি দ্বারা সুসজ্জিত করেছেন এবং সুদৃঢ় নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। -সুরা : ফুসিসলাত, আয়াত : ১২

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের ছবিই তার প্রমান।

পবিত্র কোরআনের বেশ কিছু আয়াত পাশাপাশি রাখলে বিষয়টি সহজে অনুধাবন করা সম্ভব হবে।

সুরা আম্বিয়ার ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, আমি সুদৃঢ় ছাদরূপে আসমান সৃষ্টি করেছি। আর আকাশের এপার-ওপার সংযোগের জন্য রয়েছে দরজা।

ক্রমবিস্তৃত মহাকাশ…

মহান আল্লাহ বলেন, আমি নিজ হাতে আসমান সৃষ্টি করেছি এবং আমিই এর বিস্তৃতি ঘটাই। সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৪৭।

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি দেখে না আমি ভূপৃষ্ঠের পরিধি ক্রমশ সংকুচিত করে আনছি, এর পরও কি তারাই বিজয়ী!’-সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৪৪

সাম্প্রতিক সময়ে সর্ববৃহৎ মহাকাশ গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান নাসা এ তথ্য আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে যে ভূপৃষ্ঠের পরিধি ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে এবং মহাকাশের পরিধি ক্রমেই বিস্তৃতি লাভ করছে।

চাঞ্চল্যকর এ তথ্যে অনেকেই চোখ কপালে তুলেছিল। কিন্তু আজ থেকে এক হাজার ৫০০ বছর আগে মরুভূমির বালুতে দাঁড়িয়ে পবিত্র কোরআন থেকে এ তথ্য সরবরাহ করেছিলেন মুহাম্মাদ (সা.)।

মহাকাশের বাসিন্দা কারা ?

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর আমি আসমানের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখলাম তা শক্তিশালী নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা পরিবেষ্টিত। -সুরা : জিন, আয়াত : ৮

ভূপৃষ্ঠের এই ক্ষুদ্র পরিধিতে কয়টা জীব-জানোয়ারই বা বসবাস করে। অথচ এই বিশাল আকাশজুড়ে আল্লাহর অসংখ্য সৃষ্ট জীব রয়েছে।

যারা সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহকে সিজদা করে এবং তাঁর গুণগানে মগ্ন। যাদের সংখ্যা শুধু আল্লাহই ভালো জানেন।

শেষ দিবসে কেমন হবে মহাকাশ?

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সেদিন আমি আকাশমণ্ডলী গুটিয়ে নেব যেমন লিখিত কাগজপত্র গুটিয়ে রাখা হয়। সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১০৪

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন যে একমাত্র তাঁর পবিত্র সত্তা ছাড়া মহাবিশ্বের সব কিছুই ধ্বংসশীল।

বিন্দু থেকে শুরু হওয়া এই বৃহৎ বিস্তৃত মহাবিশ্ব আবার শুরুতে ফিরে আসবে।

আর সাত আসমান বইপত্র গোটানোর মতো গুটিয়ে নেওয়া হবে।

Related Articles